সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

কাযা নামাজ নিয়ে ভিত্তিহীন বর্ণনা ও আমল

একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা : সারা জীবনের কাযা নামাযের কাফফারা
বাজারী বিভিন্ন পুস্তকে এক প্রকার নামাযের বর্ণনা পাওয়া যায়, যার দ্বারা কি না জীবনের সকল কাযা নামাযের কাফফারা হয়ে যাবে। বর্ণনাটি এই-
কারো যদি জীবনে অনেক নামায কাযা থাকে সে যেন রমযানের শেষ জুমায় এক বৈঠকে চার রাকাত নামায আদায় করে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর পনের বার সূরা কদর ও পনের বার সূরা কাউসার তিলাওয়াত করবে। এভাবে চার রাকাত নামায আদায় করবে। নিয়ত করবে এই বলে- আমি আমার কাযা হওয়া সকল নামাযের কাফফারা হিসেবে চার রাকাত নামায আদায় করছি।
কোনো কোনোটিতে আছে, সূরা ফাতেহার পর একবার আয়াতুল কুরছি ও পনের বার ইন্না আ‘তাইনা পড়বে। নামায শেষে একশত বার দরূদ পড়বে,
এস্তেগফার করবে। তারপর
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻳَﺎ ﺳَﺎﺑﻖ ﺍﻟْﻔَﻮْﺕ ﻭَﻳَﺎ ﺳﺎﻣﻊ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕ ...
বিশেষ এ দুআ পড়বে। এর দ্বারা দুইশত থেকে সাতশত বছরের কাযা নামাযের কাফফারা হবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন,
আমাদের বয়স তো সত্তর/আশি বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাহলে এত অধিক সংখ্যক বছরের রহস্য কী?
উত্তরে ইরশাদ হল, এই নামায তাদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনের নামাযের কাফফারা হয়ে যাবে। (নাউযুবিল্লাহ)
শাওকানী রাহ. আলফাওয়াইদুল মাজমুআয় এ ধরনেরই আরেকটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, সেখানে শুধু জুমার কথা আছে; রমযানের আখেরী জুমার কথা নেই। সেখানে আছে- জুমার রাতে বিশেষ পদ্ধতিতে আট রাকাত নামায পড়বে। এরপর এক হাজার বার একটি বিশেষ দরূদ পাঠ করবে। এটা তার সারা জীবনের কাযা নামাযের কাফফারা হবে, যদিও দু’শ বছরের নামায কাযা হয়ে থাকে। এ বর্ণনা উল্লেখ করার পর তিনি বলেন, এটি একটি জাল বর্ণনা।
মোটকথা, এসবই জাল বর্ণনা, এর কোনো ভিত্তি নেই। তাছাড়া এটি কুরআন মাজীদ, সহীহ হাদীস ও ইজমায়ে উম্মতের পরিপন্থী। মোল্লা আলী কারী রাহ.,
মাওলানা আবদুল হাই লখনবী ও শাহ আবদুল আযীয দেহলভী রাহ. প্রমুখ এগুলোকে জাল ও ভিত্তিহীন বলেছেন।
নামায কাযা হয়ে গেলে যত ওয়াক্ত কাযা হয়েছে তত ওয়াক্তের কাযাই আদায় করা জরুরি। একটির দ্বারা অন্যগুলো আদায় হবে না।

[দ্র. আলআছারুল মারফূআ ফিল আখবারিল মাউযূআ, পৃ. ১১০;
আলমাছনূ‘ ফি মা‘রিফাতিল হাদীসিল মাওযূ‘, বর্ণনা ৩৫৮;
আলআজউইবাতুল ফাদিলাহ, পৃ. ৩১-৩২ (টীকা); আলফাওয়াইদুল মাজমূআহ ১/৫৪ বর্ণনা নং ১১৭; রদউল ইখওয়ান আম্মা আহদাছূহু ফি আখিরি জুমুআতি রমাদান]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন