১। রোজাদার ব্যক্তি যদি রোজা রাখার পর রোজার কথা ভুলে গিয়ে অসতর্কতাবশত কিছু পানাহার করে ফেলে, রোজার কথা মোটেই স্মরণে না আসে তবে এতে রোজা ভঙ্গ হবে না। যদি ভুলবশত পেট ভরেও পানাহার করে কিংবা কয়েকবার পানাহার করে তবুও রোজা ভঙ্গ হবে না। (কিন্তু পানাহার শুরু করার পর রোজার কথা স্মরণ হলে তৎক্ষণাৎ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। স্মরণ আসার পর সামান্য কিছু গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।)
দলীলঃ হিদায়া, ১ম খন্ড, ২১৬-২১৭ পৃষ্ঠা ; আদ-দুররুল মুখতার ২য় খন্ড, ১০৫ পৃষ্ঠা ; আলমগীরী ১ম খন্ড, ২০২ পৃষ্ঠা।
২। কেউ কোনাে রোজাদারকে ভুলবশত খেতে দেখলে যদি রােযাদার ব্যক্তি এমন সুস্থ সবল হয় যে, তার রােযা রাখতে কষ্ট হয় না, তবে রােযার কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া ওয়াজীব। অবশ্য রোজা রাখার মত শক্তি না থাকলে স্মরণ করাবে না; বরং খাওয়ার অবকাশ দিবে।
দলীলঃ আল-বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড, ২৭১ পৃষ্ঠা ; আলমগীরী ১ম খন্ড ২০২ পৃষ্ঠা ; আদ-দুররুল মুখতার ২য় খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা।
৩। রোজাদার দিনে ঘুমালে যদি স্বপ্নদোষ হয় (বা স্বপ্নে কিছু খেতে দেখে) তবে রােযা ভঙ্গ হবে না।
দলীলঃ হিদায়া ১ম খন্ড ২১৭ পৃষ্ঠা।
৪। রোজা রেখে দিনের বেলায় সুরমা বা তেল লাগানাে অথবা খুশবুর ঘ্রাণ নেওয়া জায়েয। এমনকি সুরমা লাগালে যদি থুথু কিংবা শিকনিতে সুরমার রং দেখা যায় তবু রােযা ভঙ্গ হয় না এবং মাকরূহও হয় না।
দলীলঃ মারাকীল ফালাহ ২৬১ পৃষ্ঠা ; দুররে মুখতার, ২য় খন্ড ১০৬ পৃষ্ঠা।
৫। রোজাদারের অনিচ্ছায় খাদ্যনালীর ভেতরে মশা-মাছি, ধোয়া বা ধুলো গেলে রোজা ভঙ্গ হয় না। অবশ্য রোজাদার ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক গলাধঃকরণ করলে রোজা ভঙ্গ হবে।
দলীলঃ আদ-দুররুল মুখতার ২খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা ; মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড, ২৪৫ পৃষ্ঠা।
৬। লােবান বা আগরবাতি জ্বালিয়ে ধোয়া নিলে রোজা ভঙ্গ হবে। এমনিভাবে বিড়ি-সিগারেট অথবা হুক্কার ধোয়া পান করলেও রোজা ভঙ্গ হবে। কিন্তু গােলাপ, কেওড়াফল, আতর ইত্যাদি যেসব সুঘ্রাণে ধোয়া নেই এসবের ঘ্রাণ নেওয়া জায়েয আছে এবং এর দ্বারা রোজা নষ্ট হবে না।
দলীলঃ আদ-দুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা।
৭। কারও দাঁতের ফাঁকে যদি কোনাে খাদ্যদ্রব্য আটকে থাকে, আর সে খিলাল বা জিব দ্বারা তা বের করে গিলে ফেলে, মুখের বাইরে বের না করে এবং খাদ্যদ্রব্য একটি ছােলাবুটের পরিমাণ অথবা তার চেয়ে কম হয় তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। অবশ্য মুখ হতে বাইরে বের করার পর পুনরায় গিললে তবে তা একটি ছােলাবুট হতে কম হলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
দলীলঃ আদ-দুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, ১২১-১২২ পৃষ্ঠা ; হিদায়া ১ম খন্ড, ২১৮ পৃষ্ঠা।
৮। মুখের থুথু যত বেশিই হােক না কেন, গিলে ফেললে রোজার কোনই ক্ষতি হয় না।
দলীলঃ তাহতাবী আলাল-মারাকীল ফালাহ, ৩৬২ পৃষ্ঠা।
৯। (শেষ রাতে সাহরী খাওয়ার পর পান খেলে সুবহে সাদেকের পূর্বেই উত্তমরূপে কুলি করে মুখ সাফ করে নেবে।) উত্তম রূপে কুলি করার পরও সকালে থুথু কিছু লাল দেখা গেলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
দলীলঃ আদ-দুররুল মুখতার ২য় খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা।
১০। রাতে গােসল ফরয হয়ে থাকলে সুবহে সাদেকের পূর্বেই গােসল করে নেওয়া উচিত। কিন্তু যদি কেউ রাতে গােসল ফরয হওয়ার পর রাতে গােসল না করে দিনে গােসল করে তবু রোজা হয়ে যাবে। এমনকি যদি সারাদিন গােসল না করে তবে তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না। অবশ্য ফরয গােসল করতে অহেতুক বিলম্ব করে নামায কাযা করার কারণে ভিন্ন গুনাহ হবে।
দলীলঃ আদ-দুররুল মুখতার ২য় খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা ; মারাকীল ফালাহ, ৩৬২ পৃষ্ঠা।
১১। নাকের শিকনি জোরে টানার কারণে গলার ভেতরে চলে গেলেও রোজা নষ্ট হয় না। তেমনি মুখের লালা টেনে গিললেও রোজা নষ্ট হয় না।
দলীলঃ মারাকীল ফালাহ, ৩৬২ পৃষ্ঠা ; আলমগীরী ১ম খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা।
১২। কেউ সাহরী শেষে পান মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে ঘুমিয়ে গেলে এবং মুখে পান থাকা অবস্থায়ই প্রভাত হলে রােযা শুদ্ধ হবে না; (কিন্ত এ রােযা ভাঙ্গতেও পারবে না।) অবশ্য পরে এর পরিবর্তে একটি রােযা কাযা রাখতে হবে ।কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
দলীলঃ আদ-দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা।
১৩। কুলি করার সময় অসতর্কতাবশত রোজার কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও গলার ভেতরে পানি চলে গেলে (অথবা ডুব দিয়ে গােসল করার সময় হঠাৎ নাক বা মুখ দিয়ে গলার ভেতরে পানি চলে গেলে) রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু পানাহার করতে পারবে না। এ রোজার কাযা আদায় করা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব নয়।
দলীলঃ আদ-দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা ; আলমগীরী ১ম খন্ড, ২০২ পৃষ্ঠা।
১৪। মুখ থেকে বের হওয়া রক্ত থুথুর সঙ্গে গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে, কিন্তু রক্ত যদি থুথুর চেয়ে কম হয় এবং গলায় রক্তের স্বাদ অনুভব না হয় তবে রোজা ভঙ্গ হবে না।
দলীলঃ আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা ; দুররে মুখতার, ১ম খন্ড, ১০৭ পৃষ্ঠা।
১৫। কোনাে জিনিস জিবের অগ্রভাগ দিয়ে শুধু একটু স্বাদ চেখে থুথু ফেলে দিলে রোজা ভঙ্গ হয় না। কিন্তু অকারণে এরূপ করা মাকরূহ। অবশ্য কোনো মহিলার স্বামী যদি এত বদমেজাজী হয় যে, তরকারিতে লবণ-পানি একটু ঠিক মত না হলে মারপিট ও অত্যাচার করে তবে তার জন্য তরকারির লবণ দেখে থুথু ফেলে দেওয়া জায়েয আছে, মাকরূহ হবে না।
দলীলঃ আলমগীরী ১ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা ; দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড ১২২ পৃষ্ঠা।
১৬। রোজাবস্থায় শিশু সন্তানের খাওয়ার জন্য কোনাে জিনিস চিবিয়ে দেওয়া মাকরূহ। অবশ্য শিশুর জীবন ওষ্ঠাগত হলে এবং চিবিয়ে দেওয়ার মত আর কেউ না থাকলে চিবিয়ে দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলা জায়েয আছে, তখন মাকরূহ হবে না ।
দলীলঃ আলমগীরী ১ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা ; দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার ২য় খন্ড, ১২২ পৃষ্ঠা ; হিদায়া, ১ম খন্ড, ২২০ পৃষ্ঠা।
১৭। রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় কয়লা, মাজন, টুথপেস্ট (বা বালুর) দ্বারা দাত মাজা মাকরূহ। এবং এর কিছু অংশ যদি গলার ভেতর যায় তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অবশ্য কাঁচা বা শুকনা মিসওয়াক দ্বারা দাঁত মাজা জায়েয আছে। এমনকি নিমের কাঁচা ডালের মিসওয়াক দ্বারা মিসওয়াক করে তিক্ততার স্বাদ মুখে অনুভব করলেও রোজা মাকরূহ হবে না।
দলীলঃ আলমগীরী ১ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা ; দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ১২২ পৃষ্ঠা ; হিদায়া ১ম খন্ড, ২২১ পৃষ্ঠা।
১৮। ভুলে পানাহার করলে রোজা নষ্ট হয় না, কিন্তু কেউ এরূপ করার পর তার রোজা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে কিছু খেলে তার রোজা অবশ্য ভঙ্গ হয়ে যাবে কিন্তু শুধু কাযা করতে হবে, কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
এমনিভাবে অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে রোজা ভঙ্গ হয় না, তবু কেউ রোজা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে কিছু খেলে অবশ্য ভঙ্গ হয়ে যাবে, কিন্তু শুধু কাযা করতে হবে, কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
দলীলঃ আলমগীরী ১ম খন্ড, ২০৬ পৃষ্ঠা ; দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা।
১৯। যদি কেউ সুরমা বা তেল ব্যবহার করে অজ্ঞতাবশত মনে করে যে, তার রোজা ভঙ্গ হয়ে গেছে এবং তারপর ইচ্ছা করে পানাহার করে তবে তার উপর কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।
দলীলঃ আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৬ পৃষ্ঠা।
২০। রামাদ্বান মাসে কোনাে কারণবশত কারও রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে দিনের বেলায় তার জন্য পানাহার করা জায়েয নয়; বরং সারা দিন রোজাদারের ন্যায় পানাহারবিহীন থাকা ওয়াজিব।
দলীলঃ মারাকীল ফালাহ, ৩৭০ পৃষ্ঠা ; হিদায়া, ১ম খন্ড, ২২৪, ২২৫ পৃষ্ঠা।
সংগ্রহেঃ আহসান হাবীব শাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন