মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

কোরবানির গোশত বন্ঠন নীতি

আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন-
﴿ ﻓَﻜُﻠُﻮﺍْ ﻣِﻨۡﻬَﺎ ﻭَﺃَﻃۡﻌِﻤُﻮﺍْ ﭐﻟۡﺒَﺂﺋِﺲَ ﭐﻟۡﻔَﻘِﻴﺮَ ٢٨ ﴾ ‏[ﺍﻟﺤﺞ : ٢٨ ]
‘অত:পর তোমরা তা হতে(কোরবানির গোশত হতে)  আহার কর এবং
দুঃস্থ, অভাব গ্রস্থকে আহার করাও।’ [সূরা
হজ্জ্ব,:২৮]।
.
রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানীর গোশত সম্পর্কে
বলেছেন-
« ﻛﻠﻮﺍ ﻭﺃﻃﻌﻤﻮﺍ ﻭﺍﺩﺧﺮﻭﺍ »
‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার
করাও এবং সংরক্ষণ কর।’ (বুখারী, হাদীস
নং ৫৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭১)।
.
‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে
দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে
দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে,
কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে
প্রদান করবে এব পরিমাণ সম্পর্কে কুরআনের
আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাই
উলামায়ে কেরাম বলেছে, ‘কুরবানীর গোশত
তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক
ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার
হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও
প্রতিবেশীদের দান করা মুস্তাহাব
(উত্তম)।
.
কুরবানীর গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন
সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। ‘কুরবানীর
গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা
যাবে না’-বলে যে হাদিস বয়েছে তার হুকুম
রহিত হয়ে গেছে।
.
তবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ.) এ বিষয়ে
একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি
বলেছেন, ‘সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ
হলো দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের
বেশি কুরবানীর গোশত সংরক্ষণ জায়েয
হবে না। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ’ সম্পর্কিত
হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি
দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা
কুরবানী দাতা কুরবানীর গোশত সংরক্ষণ
করে খেতে পারেন। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ
রহিত হওয়া’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী
আমল করা হবে।’ (ফাতহুল বারী, ১০/২৮;
ইনসাফ, ৪/১০৭)।
.
কুরবানীর মাংস যতদিন ইচ্ছা ততদিন
সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এমনকি ‘এক
যিলহজ্জ থেকে আরেক যিলহজ্জ পর্যমত্ম
সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। ( আহমাদ,
হাদীস নং ২৬৪৫৮; সনদ হাসান: তাফসীরে
কুরতুবী, হাদীস নং ৪৪১৩)।
.
কেউ চাইলে সে তার কুরবানীর সম্পূর্ণ
গোশতকে বিতরণ করে দিতে পাবে। আর তা
করলে উপরোক্ত আয়াতের বিরোধিতা হবে
না। কারণ, ঐ আয়াতে খাওয়ার আদেশ হলো
মুস্তাহাব বা সুন্নাত। সে যুগের মুশরিকরা
তাদের কুরবানীর গোশত খেত না বলে মহান
আল্লাহ উক্ত আদেশ দিয়ে মুসলিমদেরকে
তা খাবার অনুমতি দিয়েছেন। অবশ্য কেউ
কেউ খাওয়া ওয়াজিবও বলেছেন। (তাফসীর
ইবনু কাসীর, ৩/২৯২, ৩০০; মুগনী, ১৩/৩৮০;
মুমতে, ৫২৫) সুতরাং কিছু খাওয়া হলো
উত্তম।
কুরবানীর গোশত হতে কাফেরকে তার
অভাব, আত্মীয়তা, প্রতিবেশী অথবা তাকে
ইসলামের প্রতি অনুরাগী করার জন্য দেওয়া
বৈধ। আর তা ইসলামের এক মহানুভবতা।
(মুগনী, ১৩/৩৮১; ফাতহুল বারী, ১০/৪৪২)
.
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস (রা.) তার
ইহুদী প্রতিবেশীকে দিয়ে গোশত বণ্টন শুরু
করেছিলেন। (বুখারী, আদাবুল মুফরাদ,
হাদীস নং ১২৮; সনদ সহীহ) ‘তোমরা
মুসলিমদের কুরবানী থেকে মুশরিকদের
আহার করিও না’- মর্মে যে হাদীস এসেছে
সেটা যঈফ। (বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান,
হাদীস নং ৯১১৩)।
.
কুরবানীর পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা
অন্য কোন কিছু বিক্রি করা জায়েয নয়।
কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক
হিসেবে কুরবানীর গোশত দেয়া জায়েয
নয়। হাদিসে এসেছে-
« ﻭﻻ ﻳﻌﻄﻰ ﺟﺰﺍﺭﺗﻬﺎ ﺷﻴﺌﺎ «
‘তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেয়া
হবে না’ (বুখারী- ১৭১৬ সহীহ মুসলিম- ১৩১৭)
তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কিছু
দিলে তা নাজায়েয হবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন