সোমবার, ২০ মে, ২০১৯

নফল নামাজসমূহ আদায়ের নিয়ম ও স্থান

তাহাজ্জুদের নামাজ জামা'আতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী:

নামাজের মধ্যে পাঁচ ধরণের ক্যাটাগরি রয়েছে। যথা- (১) ফরজ (২) ওয়াজিব (৩) সুন্নত (৪) নফল (৫) মুস্তাহাব।

ফরজ পাঁচ ওয়াক্তের নামায জামা'আতে আদায় করা এবং এর জন্য আযান-ইকামতের ব্যবস্থা করা জরুরি অনুরূপভাবে দুই ঈদের নামায এবং রামাযান মাসে তারাবীহের সাথে বিতর নামায জামা'আতের সাথে আদায় করা হয়। সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের নামাযও জামা'আতের সাথে পড়ার নিয়ম। এ ছাড়া বাকি অন্য কোনাে ক্যাটাগরির নামায যথা- তাহাজ্জুদ, চাশত, আওয়াবীন, ইশরাক জামা'আতের সাথে আদায় করা হয় না এবং এটা জায়িযও নয়। তাহাজ্জুদ, আওয়াবীন, ইশরাক, চাশতসহ ফরয নামাযসমূহের আগে বা পরে সুন্নাত এবং নফল নামাযসমূহ ঘরে একাকী আদায় করাই শ্রেয়।

নিম্নে এর দলিল সমূহ পেশ করা হলোঃ

দলিল নং ১:
“হযরত ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তােমরা তােমাদের ঘরে নামায পড়। তােমাদের ঘরগুলােকে কবর বানাইও না।”
দলীলঃ সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা হাদীস নং ৪২২;  সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড, ৫৩৮ পৃষ্ঠা হাদীস নং ৭৭৭।

দলীল নং ২:
“হযরত যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার মসজিদে ফরয নামায ছাড়া মহিলাদের নিজ ঘরে নামায পড়া উত্তম।
দলীলঃ মায়ানিল আছার, ২৪২ পৃষ্ঠা; তাবরানী কাবীর ৫ম খন্ড, ১৪৪ পৃষ্ঠা হাদীস নং ৪৮৯৩।

দলিল নং ৩:
তাহতাবী শরীফে আছে, “তােমরা তােমাদের ঘরগুলােকে নামায দ্বারা আলােকিত করাে এবং তােমরা ঘরগুলােকে কবর বানাইও না।”
দলীলঃ তাহতাবী ৩৯০ পৃষ্ঠা।

এখানে যে নামাযের কথা বলা হয়েছে তাহলাে তারাবীহ, সূর্য গ্রহণ, চন্দ্র গ্রহণ ব্যাতীত অন্যান্য সুন্নাত, নফল এবং মুস্তাহাব নামায।

ইসলামী শাস্ত্র পণ্ডিত-ফকীহগণের অভিমতঃ

অভিমত নং ১:
ইবন আবেদীন শামী হানাফী (রহঃ)- এর মতে, “ইমাম ব্যাতীত তিনজন মােক্তাদী তথা চারজন ব্যক্তি নিয়ে ঘটা করে নফল নামায জামা'আতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”
দলীলঃ রাদ্দুল মুতহার শামী ৪র্থ খন্ড, ২১৮ পৃষ্ঠা; ৫ম খন্ড, ২৫৮ পৃষ্ঠা; আদ্দুরুল মুখতার ২য় খন্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা; হাশিয়াতু ইবন আবেদীন ১ম খন্ড, ৫৫২ পৃষ্ঠা।

অভিমত নং ২:
আলমগীরীতে হানাফী আলেমগণের অভিমত নিম্নরূপ:
সুন্নত এবং নফল নামাযের উত্তম স্থান হলাে নিজগৃহ। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফরয নামায ছাড়া অন্যান্য নামায নিজ ঘরে পড়াই উত্তম।”

তবে শামী কিতাবে আছে, বর্তমান সময়কালে মানুষের অমনােযােগী হওয়ার মাত্রা অনেক বেশি হওয়ায় যােহর, আসর, মাগরিব, এশার সুন্নাতগুলাে আওয়াবীনসহ মসজিদে পড়াই উত্তম, তবে ফজর নামাযের দু’রাকাআত সুন্নাত নিজগৃহে পড়া সুন্নাত।
দলীলঃ আল ফাতাওয়া আল হিন্দিয়্যাহ ১ম খন্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা ; আল মুহীতুল বুরহানী ২য় খন্ড, ১৬৫ পৃষ্ঠা ; ৫ম খন্ড, ১৫২ পৃষ্ঠা।

অভিমত নং ৩:
হাসান ইব্‌ন আম্মার আশরাম্বুলালী হানাফী (রহঃ)- এর মতে, “রামাদ্বানের তারাবীহ নামায ছাড়া নফল নামাযের জামা'আত করা মাকরূহ তাহরীমী।
দলীলঃ মারাকিল ফালাহ

অভিমত নং ৪:
আল্লামা কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেন, “হযরত ইমাম হাকেম ‘আল কাফী’ নামক কিতাবের ‘কুসূফ’ নামাযের অধ্যায়ে পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে, রামাদ্বান এবং কুসূফের নামায ছাড়া নফল নামাযের জামা'আত অনুষ্ঠান মাকরূহ তাহরিমী।”

অভিমত নং ৫:
আল্লামা মুহাদ্দিস আবদুল হক দেহলভী (রহঃ) বলেছেন, “তারাবীহের নামায ব্যতীত নফল নামাযের জমা'আত করা, মাকরূহ তাহরীমা।”

অভিমত নং ৬:
ইসমাইল তাহতাভী হানাফী (রহঃ) বলেন,
“প্রচার করে নফল নামাযের জামা'আত করা মাকরূহ তাহরীমী।”
দলীলঃ তাহতাভী, ২৮৬ পৃষ্ঠা।

অভিমত নং ৭:
দেওবন্দী আলেমদের মতে, “তাহাজ্জুদ নামায জামা'আত ছাড়াই একা একা আদায় করবে। জামাআতের সাথে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”
দলীলঃ ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া ৫ম খন্ড,  ২১৬ পৃষ্ঠা।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত যে, হানাফীর মাযহাবের সকল ফকীহ এবং মুফতীগণের অভিমত এই যে, তাহাজ্জুদের জামা'আত মাকরূহ তাহরীমী। নফল নামাযের জামা'আতও তদ্রুপ মাকরূহ তাহরীমী। যারা করছেন বিভ্রান্তিতে আছেন।

সূত্রঃ ১১৩ মাসআলায় বিভ্রান্তির সমাধান ১ম খন্ড
ড. মুফতী মাওলানা মুহাম্মদ কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী
(এম এম, এম ফিল, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকীহ ও আদীব (প্রথম শ্রেণিতে প্রথম)।
রিয়াদুল জান্নাহ প্রকাশনী ঢাকা, বাংলাদেশ।

সংগ্রহেঃ আহসান হাবীব শাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন